Header Ads Widget

রাসেলস ভাইপার snake সম্পর্কে কিছু কথা

 রাসেলস ভাইপারের নামকরণ করা হয়েছে স্কটিশ জীববিজ্ঞানী প্যাট্রিক রাসেলের (Patrick Russell) নামানুসারে। প্যাট্রিক রাসেল ১৮শ শতাব্দীতে ভারতের বিষধর সাপ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন এবং এই বিষধর সাপের প্রকৃতি এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। তার সম্মানে, এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম "Daboia russelii" রাখা হয়।


"রাসেলস ভাইপার" নামটি মূলত ইংরেজি নাম "Russell's Viper" এর বাংলা অনুবাদ। "Viper" শব্দটি বিষধর সাপের একটি নির্দিষ্ট প্রজাতিকে নির্দেশ করে, যা সাধারণত হেমোটক্সিক বিষ ধারণ করে।


রাসেলস ভাইপার (Russell's Viper) একটি বিষধর সাপ যা মূলত এশিয়া মহাদেশে পাওয়া যায়। এটি খুবই বিপজ্জনক এবং এর বিষ প্রায়শই মানুষের মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম। রাসেলস ভাইপারের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii। এটি সাধারণত ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।

রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রধানত হেমোটক্সিক (রক্তবিষাক্ত), যা রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। এই সাপের কামড়ের পর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন হয় এবং এন্টিভেনম (বিষপ্রতিরোধী ওষুধ) দিতে হয়।

এটি সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় এবং শস্যক্ষেত্রে দেখা যায় এবং ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, এবং অন্যান্য সরীসৃপ খেয়ে বেঁচে থাকে।

রাসেলস ভাইপার সাধারণত বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখা যায় এবং এটি বিশেষ করে নিম্নলিখিত স্থানগুলোতে বেশি পাওয়া যায়:


1. **খেত ও জমিতে**: চাষাবাদের জমি, ধানের খেত, এবং অন্যান্য কৃষি এলাকায়।

2. **গ্রামীণ এলাকা**: গ্রামীণ বসতি এবং গ্রামাঞ্চলের আশেপাশে।

3. **ঝোপঝাড় ও বনাঞ্চল**: ঝোপঝাড়, ঘাসবন, এবং শুকনো পাতা বা গাছের নিচে।

4. **পাথরের নিচে**: পাথর বা বড় কংক্রিটের টুকরার নিচে।

5. **নদীর তীর**: নদী ও জলাশয়ের আশেপাশে।


রাসেলস ভাইপার নিশাচর সাপ হলেও দিনের বেলাতেও সক্রিয় থাকতে পারে। এটি প্রায়শই লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে এবং আশেপাশের পরিবেশের সাথে মিশে যায়, যার ফলে একে চিহ্নিত করা কঠিন হতে পারে। তাই এই সাপের বসবাস এলাকায় চলাফেরা করার সময় সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।

রাসেলস ভাইপার অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ। এর বিষ প্রধানত হেমোটক্সিক (রক্তবিষাক্ত), যা রক্তের কোষ ধ্বংস করে, রক্তজমাট বাঁধতে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। রাসেলস ভাইপারের বিষের কিছু প্রধান প্রভাব নিম্নরূপ:


1. **রক্তক্ষরণ**: রাসেলস ভাইপারের বিষ রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট করে, ফলে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক রক্তক্ষরণ হতে পারে।

2. **কিডনির ক্ষতি**: বিষ কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে, যা কিডনি ফেলিয়ারের (বিফল) কারণ হতে পারে।

3. **মাংসপেশির ক্ষতি**: বিষ মাংসপেশিকে নষ্ট করতে পারে, ফলে পেশির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

4. **দূর্বলতা ও প্যারালাইসিস**: বিষ স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে, যা পেশির দূর্বলতা এবং প্যারালাইসিসের (অচল) কারণ হতে পারে।

5. **ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া**: কামড়ের স্থানটি তীব্র ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে।


রাসেলস ভাইপারের কামড়ের পরে দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে মৃত্যু হতে পারে। তাই এই সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি।

রাসেলস ভাইপার কামড়ের ক্ষেত্রে এন্টিভেনম (বিষপ্রতিরোধী ওষুধ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এন্টিভেনম রাসেলস ভাইপারসহ অন্যান্য বিষধর সাপের বিষের প্রতিকার করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বহুমূল্য এন্টিভেনম তৈরি করা হয়, যা বিভিন্ন সাপের বিষের প্রতিরোধে সক্ষম।


### রাসেলস ভাইপার কামড়ের পরে করণীয়:

1. **শান্ত ও স্থির থাকা**: সাপের কামড়ের পর ব্যাক্তি যাতে কম নড়াচড়া করে, তা নিশ্চিত করা উচিত। এর ফলে বিষ শরীরের অন্যান্য অংশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে না।

2. **প্রাথমিক চিকিৎসা**: কামড়ের জায়গাটি ধুয়ে ফেলা উচিত এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত।

3. **হাসপাতালে যাওয়া**: যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে পৌঁছানো উচিত। রাসেলস ভাইপারের এন্টিভেনম সাধারণত হাসপাতালেই পাওয়া যায়।

4. **এন্টিভেনম প্রয়োগ**: ডাক্তার এন্টিভেনম প্রয়োগ করবেন, যা সরাসরি শিরায় ইনজেকশন করা হয়। এন্টিভেনম প্রয়োগের পর রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা (ICU) বিভাগে রাখা হয়, যাতে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়।


এন্টিভেনম সাধারণত সাপের বিষ নিরোধ করার জন্য সরাসরি শিরায় দেওয়া হয়। এটি বিষের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং রোগীর অবস্থার উন্নতি করতে সহায়তা করে। রাসেলস ভাইপারের কামড়ের পরে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে এবং যথাযথ এন্টিভেনম প্রয়োগ করলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

রাসেলস ভাইপারের কামড়ের পরে ব্যবহৃত এন্টিভেনম হলো বহুমূল্য এন্টিভেনম বা polyvalent antivenom, যা বিভিন্ন ধরনের বিষধর সাপের বিষের প্রতিরোধে কার্যকর। এই এন্টিভেনম সাধারণত নিম্নলিখিত সাপগুলোর বিষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়:


1. **রাসেলস ভাইপার (Daboia russelii)**

2. **ইন্ডিয়ান কোবরা (Naja naja)**

3. **কমন ক্রেট (Bungarus caeruleus)**

4. **স-স্কেল্ড ভাইপার (Echis carinatus)**


### এন্টিভেনম প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া:

1. **বিষ সংগ্রহ**: প্রথমে সাপের বিষ সংগ্রহ করা হয়।

2. **ইমিউনাইজেশন**: ঘোড়া বা ভেড়া জাতীয় প্রাণীদের ছোট ডোজে বিষ প্রয়োগ করে ইমিউন করা হয়, যাতে তাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়।

3. **এন্টিবডি সংগ্রহ**: প্রাণীদের রক্ত থেকে এন্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়।

4. **শুদ্ধকরণ**: প্লাজমা থেকে এন্টিবডি শুদ্ধ করে এন্টিভেনম তৈরি করা হয়।


### ব্যবহারের নিয়ম:

- **ইনজেকশন পদ্ধতি**: এন্টিভেনম সাধারণত শিরায় (intravenous) ইনজেকশন পদ্ধতিতে দেওয়া হয়।

- **ডোজ**: রোগীর অবস্থা এবং বিষের মাত্রার উপর নির্ভর করে ডোজ নির্ধারণ করা হয়।


### লক্ষ্য:

- বিষের প্রভাব কমানো

- রক্তক্ষরণ বন্ধ করা

- অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি রোধ করা

- স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বজায় রাখা


রাসেলস ভাইপার কামড়ের পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা এবং এন্টিভেনম প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি।

Preview post



Post a Comment

0 Comments